বৈরুতের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর ট্রমায় ভুগছে বেঁচে যাওয়া মানুষ। ওই ঘটনায় তিন লাখের মতো মানুষ তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেনের হিসাব অনুযায়ী বিস্ফোরণে এক লাখ শিশু গৃহহীন হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ আতঙ্কগ্রস্ত।
৪ আগস্ট লেবাননের রাজধানী বৈরুতে যখন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তখন বাসায় খেলছিল তিন বছরের শিশু আবেদ ইতানি। বিস্ফোরণে ঘরের কাচের দরজা টুকরা টুকরা হয়ে যায়, কেটে যায় ইতানির হাত-পা । আহত অবস্থায় তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। জরুরি কক্ষে ইতানির চোখে পড়ে আহত ও রক্তাক্ত শিশু, বয়সী আরো অনেককে । তার পর থেকে আর স্বাভাবিক আচরণ করছে না ইতানি, ট্রমায় চলে গেছে ছোট্ট অবুঝ শিশুটি।
ইতানির মা বলছেন, ‘আমি যখন হাসপাতালে যাই, তখন দেখতে পাই, ইতানি জরুরি সেবাকক্ষের এক কোণে বসে কাঁপছে এবং রক্তাক্ত মানুষগুলোকে দেখছে। জরুরি সেবাকক্ষের পুরো মেঝে তখন রক্তে ভেসে যাচ্ছিল।’ তিনি জানান, তার পর থেকে ইতানি লাল যেকোনো কিছু দেখলেই ভয় পাচ্ছে। সে লাল জুতা পরতেও ভয় পাচ্ছে। ইতানি চাইছে, এই লাল জুতাগুলো ধুয়ে দেওয়া হোক।
ইতানির মতো আরো দুই শিশু ইয়াসমিন (৮) ও তালিয়া (১১)। এই দুই শিশুর মা জয়নাব গাজালে বলেন, এই বিস্ফোরণে তাঁদের ঘরের জানালা ভেঙে গেছে। তার পর থেকে শিশু দুটি আর একা ঘুমাতে চায় না। তিনি আরো বলেন, “আমার মেয়ে ইয়াসমিন আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘আমার ছোটবেলা এমন কেন’?”
এই বিস্ফোরণের পর অনেক শিশুর চিকিৎসা দিয়েছেন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ মাহা গাজালে। তিনি বলেন, অনেক শিশু অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তারা জিজ্ঞেস করছে, এমন ঘটনা আবার ঘটবে না তো? অনেক শিশু বাড়ি ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। কাচের দরজা-জানালার কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সেভ দ্য চিলড্রেনের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ জয় আবি হাবিব বলেন, ট্রমাগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ধরনের আচরণ করে।
লেবাননে ৪ আগস্টের বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা গেছে ১৭০ জনের বেশি। আহত হয়েছে ছয় হাজারের বেশি মানুষ।